Advertisement

Responsive Advertisement

তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগ | Copper & Bronze Age

মধ্য ইউরোপীয় নব্যপ্রস্তর যুগ তাম্রযুগ হিসেবে পরিচিত। ইউরোপে তামা ও ব্রোঞ্জের যুগের প্রচলন হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে। নব্যপ্রস্তর যুগব্রোঞ্জ যুগের মাঝামাঝি সময়কালকে বলা হয় তাম্রযুগ। 

তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগ | Copper & Bronze Age

তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগ


উৎপত্তিগতভাবে তাম্রযুগ বলতে বুঝায় সেই যুগকে যখন মানুষের যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র তৈরির প্রধান উপাদান ছিল তামা। 

খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে নিকট প্রাচ্যে (সাইপ্রাস, মিশর, ইরাক, ইরান, ইসরাইল, জর্ডান, লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ) তামার প্রচলন ছিল। 

এসব দেশ থেকে মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে তামার প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীনকাল হতে সিনাই অঞ্চল ও সাইপ্রাস দ্বীপে তামার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। 

তাম্রযুগের সভ্যতা কেবল সিন্ধুর মহেঞ্জোদারো ও পাঞ্জাবের হরপ্পাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সমগ্র গাােয় উপত্যকা, বক্সার, পাটনা, কনৌজ ও উজ্জয়িনীতেও ওই সময়ের অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

এ ছাড়া হস্তিনাপুর, কুরুক্ষেত্র, ইন্দ্রপ্রস্থ, মথুরা, গুজরাট এবং এলাহাবাদের ৩২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে কৌশাম্বিতেও আবিষ্কৃত হয়েছে তাম্রযুগের নিদর্শন। 

ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলায় অায় নদীর তীরে পাণ্ডু রাজার ঢিবি খননের ফলে তাম্রযুগের কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে।

নবোপলীয় সমাজ বিকাশের মধ্য দিয়ে মিসর বা মেসোপটেমিয়াতে প্রথম ব্রোঞ্জ যুগের নগরসভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল। 

খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে মিসর, ভারত, মেসোপটেমিয়া ও চীনে ব্রোঞ্জযুগ শুরু এবং তা খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। 

সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগের প্রভাব (Impact of Copper & Bronze Ages on the Development of Society and Civilization)

খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দে লৌহ আবিষ্কারের সাথে সাথে এ যুগের অবসান ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু অববাহিকায় ব্রোঞ্জ যুগের উন্নত নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে।"

 সম্ভবত ব্যাবিলন বা মিসর থেকেই ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশে এসে পৌঁছায়।

তাম্রযুগ (Copper age)

ইতিহাসে তাম্রযুগের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। বস্তুত প্রস্তর ও ব্রোঞ্জ যুগের মধ্যবর্তী সময়ে মাত্র কয়েকশত বছরের জন্য এ যুগ স্থায়ী হয়। পাথর এবং তামার ব্যবহার এই যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

ধাতুর মধ্যে প্রথমে তামার ব্যবহার আরম্ভ হয়। প্রথমে তামা ছিল খুবই দুর্লভ বস্তু। সেজন্য পাথরের হাতিয়ারের সাথে তামা মিশ্রিত করে হাতিয়ার তৈরি করা হতো। 

তামা এবং পাথরকে যতদিন পর্যন্ত মানুষ হাতিয়ার হিসেবে পাশাপাশি ব্যবহার করেছে ততদিন মানব সভ্যতার এ অবস্থাকে তাম্রপলীয় যুগ (Chaleolithic age) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

এ যুগের সভ্যতার বিশেষ অবদান হলো- সমুদ্রস্রোতের দিক নির্ণয়, আত্মরক্ষা ও যুদ্ধের উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র তৈরি। 

এ যুগে মানুষ বিভিন্ন ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি, অস্ত্রাদি ও গহনাপত্র তৈরির কাচামাল হিসেবে তামার ব্যবহার শুরু করে, যা সামাজিক পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

এছাড়া খনি ও তামার কারণে সমাজে নতুন পেশা, সামাজিক গোষ্ঠী এবং সামাজিক স্তরবিন্যাসের জন্ম হয়। এ সময় স্তরবিন্যাসের শীর্ষে ছিল যোদ্ধাশ্রেণি যারা তাদের গ্রাম সম্প্রদায়কে রক্ষা করত। 

পাশাপাশি তামার ব্যবসা দূরবর্তী স্থানের সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ ঘটায়। পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে বোঝা যায়, তাম্রযুগের মানুষ সম্ভবত মাতৃদেবী ও লিঙ্গপূজা করত। 

তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। এ ছাড়া তারা শিকার ও মাছ ধরার কাজের সাথেও জড়িত ছিল। এ যুগের মানুষ মৃতদেহ কবর দিত।

ব্রোঞ্জ যুগ (Bronze age)

প্রাচীন ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের ধাতুগত সাংস্কৃতিক উন্নয়নের তৃতীয় পর্যায় হলো ব্রোঞ্জ যুগ । 

সম্ভবত সুমেরীয় সভ্যতায় সর্বপ্রথম তামার সাথে টিন মিশিয়ে ব্রোঞ্জ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ যুগকে প্রথম ধাতুর যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ যুগের শুরুর পর্যায়কে অনেক সময় তামা পাথরের (Chalcolithic) যুগ বলা হয়। 

১৮ অর্থাৎ পাথরের যুগ ও লৌহ যুগের মধ্যবর্তী প্রযুক্তিগত যুগকে বলা হয় ব্রোঞ্জ যুগ। এ যুগে ব্রোঞ্জ ধাতু দিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, অস্ত্র তৈরি করা হয়, যা মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে। 

এ প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়ার ভুক্তিতে বলা হয়েছে, “The overall period is characterized by the full adoption of bronze in many regions, though the place and time of the introduction and development of bronze technology was not universally synchronous.'।” নিকট প্রাচ্যে ব্রোঞ্জ যুগের তিনটি পর্যায় লক্ষণীয় । যথা—

  • প্রাক ব্রোঞ্জ যুগ (Early Bronze Age): খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০-২১০০ অব্দ ।
  • মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ (Middle or Intermediate Bronze Age ) খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০-১৫৫০ অব্দ।
  • পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগ (Late Bronze Age ) : খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০-১৪০০ অব্দ ।

ব্রোঞ্জ যুগে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় এবং তার ফলে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ বাজার গড়ে ওঠে। বাজারের আবির্ভাব পণ্য বিক্রেতাকে উৎপাদনে প্রেরণা জোগায়। 

এ যুগে যাযাবর গোষ্ঠীগুলো স্থায়ী বসতি গড়ে তোলায় সমাজ গড়ে ওঠে। তারা গাছের গুড়ির উপর পাতার ছাউনি দিয়ে ঘর বানাতো। 

ইতোমধ্যে চাকার আবিষ্কার হওয়ায় ষাড়চালিত গাড়ির ব্যবহার শুরু হয়। এ্যাসিরীয় ও সুমেরীয় অঞ্চলে সর্বপ্রথম যানবাহন হিসেবে নৌকা প্রচলিত হয়।

বাণিজ্যের প্রসারে তা সহায়তা করে। এছাড়া ব্রোঞ্জযুগে চাকা ও পশুর সাহায্যে চাষাবাদ শুরু হয়। 

এ যুগে সর্বপ্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে ভূমধ্যসাগর, আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে পাল তোলা বড় বড় নৌকা বা জাহাজ চলাচল করত। 

তার প্রমাণস্বরূপ মিসরীয় মাটির পাত্রে পাল-টাঙানো নৌকার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। সমুদ্রপথে যাতায়াতের জন্য মানুষ আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করত। ফলে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন হয়। 

এ সময় দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্য আদান-প্রদানের পরিবর্তে ব্রোঞ্জের সাহায্যে ব্যবসায়ের কাজ চলতে থাকে। এ যুগের মানুষ ব্রোঞ্জ দিয়ে নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে। 

এসব হাতিয়ারের মধ্যে বর্ম, শিরস্ত্রাণ, তলোয়ার, বর্শা, তীর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নব্যপ্রস্তর যুগে যে লিখন পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল ব্রোঞ্জ যুগে তার যথেষ্ট উন্নতি হয়। এ যুগের শেষ সময়ে মিশরীয়রা 'হায়ারোগ্লিফিক' লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করে। 

লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হওয়ায় শিক্ষার প্রসার ঘটে। এ যুগে ব্রোঞ্জের তৈরি নানারকম যন্ত্রপাতি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। 

এর মধ্যে মিশরীয়, সুমেরীয়, ক্যালডীয়, ব্যাবিলনীয়, এ্যাসিরীয়, ক্যালডীয়, হিট্টাইট, সিন্ধু, ক্রিট, আজটেক, ইনকা, চৈনিক ইত্যাদি সভ্যতা উল্লেখযোগ্য। এ যুগের শেষদিকে মানুষ মৃতদেহ পোড়ানোর রীতি চালু করে ।

Post a Comment

0 Comments