Advertisement

Responsive Advertisement

ঘুর্ণায়মান মহাবিশ্ব এবং আল কোরআন | আল কোরআন ও বিজ্ঞান পর্ব-১

সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ বা সৌরকেন্দ্রিকতাবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Heliocentrism ) হলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের মডেল যেখানে পৃথিবী এবং গ্রহগুলি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে সূর্যের চারপাশে ঘোরে। ঐতিহাসিকভাবে, সূর্যকেন্দ্রিকতা ভূকেন্দ্রিকতার বিরোধী ছিল, যা পৃথিবীকে কেন্দ্রে স্থাপন করেছিল। 

পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে এমন ধারণাটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রস্তাবিত হয়েছিল । (প্রমাণ লিংক- 01)

ঘুর্ণায়মান মহাবিশ্ব এবং বিজ্ঞান

ঘুর্ণায়মান মহাবিশ্ব এবং আল কোরআন


নিকোলাস কেপারনিকাস প্রথম আবিষ্কার করেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।

বহুবছর আগে গ্রিক যুগের একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি বলেছিলেন: পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ—নক্ষত্রগুলো আবর্তিত হয়। এই মতবাদটি সম্পর্কে কোপারনিকাস সন্দেহ প্রকাশ করেন। 

যেহেতু সে সময় টেলিস্কোপ ছিল না, তাই গাণিতিক পদ্ধতি উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় ছিল না। কোপারনিকাস যখন গির্জার যাজক ছিলেন, তখন মহাকাশ সম্বন্ধে গবেষণার ভালো সুযোগ পান। তিনিই প্রথম বলেন, পৃথিবী নয়, সূর্যই হলো সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু। সূর্যই সমগ্র সৌরজগতকে আলোকিত করে। তাঁর মতবাদের নাম: ‘কোপারনিকীয় মতবাদ’।

 তবে তাঁর গবেষণালব্ধ মতবাদসমূহ চাপাতে সাহস করেন নি, কারণ তিনি ছিলেন গির্জার যাজক। তাঁর মতবাদ প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী। তাঁর বিপ্লবাত্মক মতবাদ লিপিবদ্ধ হওয়ার পরেও দীর্ঘ প্রায় তেরো বছর অপ্রকাশিত রাখতে হয়। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়১৫৪৩ সালে। মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে। গ্রন্থটির নাম: ‘ DE REVALUTIONIBUS ORBIUM CELESTIM ’ । 

কোপারনিকাস আরো বলেন, সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘোরে বলেই ঋতু পরিবর্তন সম্ভব। আর পৃথিবী তাঁর নিজ অক্ষের উপর আবর্তিত হয় বলেই দিন—রাত্রি হয়।

ঘুর্ণায়মান মহাবিশ্ব এবং আল কোরআন



মহাশূন্যে যে সবকিছুই আপন আপন কক্ষপথে ঘুরতেছে সে সম্পর্কে পবিত্র আল-কুরআনের বাণী :

অর্থ : আর সূর্য তার গন্তব্যস্থলের দিকে ছুটে চলেছে। এটা মহাপরাক্রমশালী সুবিজ্ঞ সত্তার সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা। আর চাঁদের মঞ্জিলসমূহও আমরা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। এভাবে তা তাদের (মঞ্জিলসমূহের) উপর দিয়ে চলে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খেজুরের শুষ্ক পুরাতন শাখার মতো হয়ে পড়ে। সূর্যের ক্ষমতা নেই যে সে চাঁদকে ধরে ফেলে আর না রাত দিনকে ছেড়ে এগিয়ে যেতে পারে। আর সবকিছুই মহাশূন্যের মধ্যে সাঁতার কাটছে বা গতিশীল অবস্থায় চলছে।

وَٱلشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّۢ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ ٣٨

وَٱلْقَمَرَ قَدَّرْنَـٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلْعُرْجُونِ ٱلْقَدِيمِ ٣٩

لَا ٱلشَّمْسُ يَنۢبَغِى لَهَآ أَن تُدْرِكَ ٱلْقَمَرَ وَلَا ٱلَّيْلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِ ۚ وَكُلٌّۭ فِى فَلَكٍۢ يَسْبَحُونَ ٤٠

(সূরা ইয়াসিন : ৩৮, ৩৯ ও ৪০)

ব্যাখ্যা : বাস্তবে এগুলি হচ্ছে তাওহীদের পক্ষে অকাট্য দলিল। যার মধ্যে আমরা পাচ্ছি এমনকিছু তত্ত্ব ও তথ্য যা থেকে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের অবস্থান, এদের গতিশীলতা, গতিজড়তা, আকাশরাজ্যে জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর অবস্থান, তাদের সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে অতিক্রম করে অন্যত্র সরে নড়ে না যাওয়ার নিশ্চয়তা এবং দিন ও রাত সংঘটিত হওয়ার সুনির্ধারিত ব্যবস্থাপনার মূল হাকীকত ।

এখানে একথাও সুস্পষ্টভাবে জানা গেল যে, সূর্য তার কক্ষপথে যখন দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে তখন পরিবারের বা সৌরজগতের সকলকেই অর্থাৎ পৃথিবী, চাঁদ ও অন্যান্য-গ্রহ উপগ্রহ সবকিছুকে নিয়েই এমনভাবে ছুটে চলছে যে, কেউ কারো নির্ধারিত পথ ছেড়ে অন্য কারো পথে ঢুকে পড়তে পারবে না এবং পারবে না একটার সঙ্গে আরেকটার টক্কর লাগতে-যা

একই সত্তার সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা ছাড়া সম্ভব হতে পারে না । ঐ একই বিষয়ের ২য় দলিল পাওয়া যায় সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ্ বলেন :

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ فِى فَلَكٍۢ يَسْبَحُونَ ٣٣

অর্থ: এবং তিনিই তো (আল্লাহ) যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র । সব মহাশূন্যের মধ্যে ঘুরছে বা সাঁতরাচ্ছে।

ব্যাখ্যা : এখানে লক্ষণীয় যে, 'ইয়াসবাহুন' থেকে সাঁতরানোর মতো ঘোরা বুঝা যায় অর্থাৎ সমুদ্রে মাছ যেমন পানির উপর দিয়ে সাঁতরায়, তখন প্রতিনিয়ত তার অবস্থান পরিবর্তন করে। 

অর্থাৎ একটা মাছ সাঁতরানোর সময় না কোনো একই অক্ষাংশের উপর থেকে সাঁতরাতে পারে আর না কোনো একই দ্রাঘিমাংশের উপর থেকে সাঁতরাতে পারে। সে প্রতিনিয়ত

স্থান পরিবর্তন করে সাঁতরায়। ঠিক তদ্রূপ আকাশে যা কিছুই আছে তা প্রতিনিয়ত ঘুরছে আর সাঁতরাচ্ছে অর্থাৎ স্থান পরিবর্তন করছে। 

উপরে বর্ণিত দু'টি স্থান থেকে পৃথিবীর আহ্নিক গতির দলিল পাওয়া যায় । তাছাড়া নিম্নের ৩টি আয়াত থেকে পৃথিবীর বার্ষিক গতির দলিল পাওয়া যায়। 

যথা : ১. সূরা রা'দের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন :


ٱللَّهُ ٱلَّذِى رَفَعَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍۢ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ يَجْرِى لِأَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ۚ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ يُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ ٢


অর্থ: তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলকে দেখার মতো কোনো খুঁটি ব্যতিরেকেই বহু ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন। পরে তিনি নিজের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে একটা নিয়মের অধীন বানিয়ে দিয়েছেন। 

এই গোটা ব্যবস্থাপনার প্রত্যেকটি জিনিসই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তকার জন্য চলছে, চলবে ও চলতে থাকবে (এই নির্দিষ্ট সময় যখনই শেষ হয়ে যাবে তখনই কিয়ামত হবে)। আর আল্লাহ-ই এই সমস্ত কাজের ব্যবস্থা করছেন। 

তিনি (তার) নিদর্শনগুলি আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করেন। যেন তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাতের কথা নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারো।

এ আয়াতে উল্লেখিত كُلٌّۭ يَجْرِى لِأَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ۚ শব্দগুলো থেকে বুঝাচ্ছে, পৃথিবী ও মহাশূন্যের সবকিছুসহ প্রতিনিয়ত তার কক্ষপথে ঘুরে চলছে এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। 

এই চলার একটা নিয়ম আল্লাহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যে নিয়মে পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় একবার করে সূর্যের চারপাশ দিয়ে ঘুরে আসে। এর সমর্থনে সূরা লোকমানের ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন :


أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّۭ يَجْرِىٓ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى وَأَنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌۭ ٢٩

অর্থ: তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে নিয়ে আসেন আর দিনকে নিয়ে আসেন রাতের মধ্যে। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে (এক সুনির্দিষ্ট নিয়মে) নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছেন। সবকিছুই এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলছে (অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত)। আর (তোমরা কি জানো না যে) তোমরা যা কিছুই করছো আল্লাহ তার সবকিছুর খবর রাখেন।

এখানে মহাশূন্যের সবকিছুই যে চলছে তার ঐ একই দলিল পাওয়া গেল, যা পূর্বের আয়াতেও প্রায় একই ভাষায় বলা হয়েছে।

ঐ একই কথার সমর্থনে সূরা যুমারের ৫ম আয়াতে আল্লাহ বলছেন:

خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ ٱلَّيْلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ يَجْرِى لِأَجَلٍۢ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفَّـٰرُ ٥

অর্থ : তিনি আসমানসমূহ এবং পৃথিবীকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন (অর্থাৎ মানানসইভাবে সৃষ্টি করেছেন যার মধ্যে অবৈজ্ঞানিক কোনো ব্যবস্থাপনাই নেই)। তিনি দিনের পর রাতকে এবং রাতের পর দিনকে পৌঁছাতে থাকেন (অর্থাৎ এমন ব্যবস্থা করেছেন যেন একটা বিজ্ঞানসম্মত পন্থায় দিনের পর রাত এবং রাতের পর দিন হতে পারে)। 

তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে এমনিভাবে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছেন যে, প্রত্যেকটিই নির্দিষ্ট নিয়মে চলতে থাকে । জেনে রাখো, তিনি প্রবল ও ক্ষমাশীল।

পৃথিবী কেন সূর্যের চারদিকে ঘোরে?

এই মহাবিশ্বে প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব মহাকর্ষীয়বল বা (Gravitatonal force) রয়েছে। মহাকর্ষবলের প্রভাবে তার নিজস্ব কক্ষপথে একটি আকর্ষনের সৃষ্টি করে,যার ফলে সেই কক্ষপথে যা কিছুই আসে তা নিজের কাছাকাছি টেনে নেয়।

সূর্য একটি নক্ষত্র এবং পৃথিবী একটি গ্রহ। সাধারনত, নক্ষত্রের মহাকর্ষন বল গ্রহের থেকে লক্ষ-কোটি গুন বেশি হতে পারে।

যেকমনটি, আমাদের গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে আমাদের নক্ষত্র (সূর্য) প্রায় ১৩ লক্ষ গুন বড়। এক্ষত্রে তাঁর মহাকর্ষন বলও পৃথিবীর থেকে লক্ষ-লক্ষ গুন বেশি হবে, যার দরুন উক্ত কক্ষপথে শুধুমাত্র পৃথিবী নয় বরং আরও ৮টি গ্রহ প্রতিনিয়ত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছে তাঁর মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে।

Post a Comment

0 Comments